ভূমিকা
নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের ভিত্তি। এটি নাগরিকদের তাদের নেতা নির্বাচন করার এবং তাদের দেশের দিকনির্দেশনা প্রভাবিত করার ক্ষমতা দেয়।
তবে, নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতি দেশভেদে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, অনেক দেশ ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণ উন্নত করার জন্য তাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন এবং উদ্ভাবন এনেছে।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন দেশে নির্বাচন কীভাবে কাজ করে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বব্যাপী নির্বাচনী ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - ইলেক্টোরাল কলেজ এবং জনপ্রিয় ভোট
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রতি চার বছর অন্তর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়। নির্বাচন পরোক্ষ; নাগরিকরা একদল নির্বাচককে ভোট দেয় যারা তারপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে।
এই ব্যবস্থাকে ইলেক্টোরাল কলেজ বলা হয়। প্রতিটি রাজ্যের জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট থাকে। একজন প্রার্থীকে জয়ী হতে ৫৩৮টি ভোটের মধ্যে কমপক্ষে ২৭০টি ভোট পেতে হবে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ভোটার আইডি আইন, মেইল-ইন ভোটিং এবং নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তি এবং ভুল তথ্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
২. যুক্তরাজ্য – ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট সিস্টেম
যুক্তরাজ্যে, ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (FPTP) সিস্টেম ব্যবহার করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিকরা তাদের স্থানীয় এলাকা (নির্বাচনী এলাকা) থেকে প্রার্থীকে ভোট দেয় এবং সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত প্রার্থী জয়ী হয়।
হাউস অফ কমন্সে সর্বাধিক আসন জয়ী দল সরকার গঠন করে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলি ব্রেক্সিট, দলীয় নেতৃত্বের পরিবর্তন এবং তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে।
৩. ভারত – বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক নির্বাচন
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক নির্বাচন পরিচালনা করে। নাগরিকরা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর লোকসভার (নিম্নকক্ষ) সদস্যদের নির্বাচন করে।
নির্বাচনটি ৫৪৩টি নির্বাচনী এলাকায় FPTP সিস্টেম অনুসরণ করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (EVM) এবং ভোটার যাচাইকৃত কাগজ অডিট ট্রেইল (VVPAT) ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া, ভোটারদের উপস্থিতিও বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে।
৪. জার্মানি – মিশ্র-সদস্যের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব
জার্মানি একটি মিশ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা ব্যবহার করে যা সরাসরি ভোটদান এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বকে একত্রিত করে। ভোটাররা দুটি ভোট দেয়: একটি স্থানীয় প্রার্থীর জন্য এবং অন্যটি একটি রাজনৈতিক দলের জন্য।
এই ব্যবস্থার লক্ষ্য স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের সাথে দলীয় ক্ষমতায় সামগ্রিক ন্যায্যতার ভারসাম্য বজায় রাখা।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে জার্মানি সবুজ রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে এবং ঐতিহ্যবাহী দলগুলির প্রভাব হ্রাস পেয়েছে।
৫. ফ্রান্স – দুই-রাউন্ড ভোটদান ব্যবস্থা
ফ্রান্স দুই-রাউন্ড পদ্ধতির মাধ্যমে তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। যদি কোনও প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে ৫০% এর বেশি ভোট না পান, তবে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়।
এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করে যে বিজয়ীর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে ফ্রান্স অভিবাসন, মুদ্রাস্ফীতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের মতো বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করেছে।
৬. ব্রাজিল – ইলেকট্রনিক ভোটদান এবং রানঅফ
ব্রাজিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি ইলেকট্রনিক ভোটদান ব্যবস্থা এবং দুই-রাউন্ড পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই ব্যবস্থা তার গতি এবং স্বচ্ছতার জন্য পরিচিত।
ব্রাজিলে ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী সকল নাগরিকের আইন অনুসারে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্রাজিলে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং রাজনৈতিক সহিংসতা জনসাধারণের উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
৭. জাপান - FPTP এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সংমিশ্রণ
জাপানের নির্বাচনে একটি হাইব্রিড সিস্টেম জড়িত যেখানে ভোটাররা স্থানীয় জেলাগুলিতে (FPTP) প্রার্থী নির্বাচন করে এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) ভোট দেয়।
প্রতি চার বছর অন্তর প্রতিনিধি পরিষদ নির্বাচিত হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জাপানে, তরুণ ভোটারদের ভোটদানে উদাসীনতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা নির্বাচনী সংস্কারের আহ্বান জানায়।
৮. দক্ষিণ আফ্রিকা - আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব
দক্ষিণ আফ্রিকা একটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা ব্যবহার করে যেখানে ভোটাররা প্রার্থী নয়, একটি দল নির্বাচন করে।
দলের ভোটের অংশ নির্ধারণ করে যে তারা সংসদে কত আসন পাবে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলি দুর্নীতি, পরিষেবা সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
৯. অস্ট্রেলিয়া - অগ্রাধিকারমূলক ভোটদান
অস্ট্রেলিয়া অগ্রাধিকারমূলক ভোটদান পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে ভোটাররা পছন্দের ক্রম অনুসারে প্রার্থীদের স্থান দেয়।
এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে যে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়াতে বাধ্যতামূলক ভোটদানের ফলে অংশগ্রহণের হার উচ্চ হয়েছে এবং এখানে নির্বাচনগুলিকে প্রায়শই সুষ্ঠু এবং সুপরিচালিত হিসাবে করা হয়।
0 Comments